সাতক্ষীরার ফুটপাত ও বিভিন্ন শপিংমল নববর্ষ ও ঈদ উৎসব ঘিরে ক্রেতাদের ভিড়
মোঃ আজগার আলী, জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরাঃ
সামনেই শুরু হবে শুভ নববর্ষ, এর এক সপ্তাহ পরেই মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। দুইটি বড় উৎসবকে কেন্দ্র করে ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় বড় শপিংমল, ফ্যাশন হাউজে বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড়। সাধ্যের মধ্যে সাধের সমন্বয় করে নিজেকে ও পরিবারকে সাজিয়ে তুলতে পছন্দের পোশাক কিনতে চান সবাই। তাই ছুটছেন বিভিন্ন দোকান ও শপিংমলে।
শুক্রবার ছুটির দিনেও সাতক্ষীরার বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলে ভিড় দেখা গেছে। সব দোকানেই ছিল ক্রেতা সমাগম। কাউকে পছন্দের পোশাক কিনতে, কাউকে পোশাকের ছবি তুলতে ও ভিডিও কলে প্রিয়জনকে পোশাক দেখাতে দেখা গেছে। তবে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই বলছেন, এবার পোশাকের দাম চড়া। গত বছরের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে পোশাকের দাম।
বিক্রেতারা বলছেন, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় ক্রেতাদের ভিড় বেশি ছিল। তবে সবাই যে কিনতে এসেছেন, তা নয়। অনেকেই আজ দেখতে এসেছেন, দাম যাচাই করছেন। মূল বেচাকেনা শুরু হবে ১০ এপ্রিলের পর। ডলার সংকটের কারণে দেশীয় পোশাকে বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে। ফলে গত বছরের চেয়ে এবার পোশাকের দাম বেশি। পোশাকের ক্ষেত্রে ছেলেদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে পাঞ্জাবি ও পায়জামা। মেয়েদের পছন্দ ওয়ানপিস, থ্রিপিস ও ওয়েস্টার্ন পোশাক। বাচ্চাদের জন্য অভিভাবকরা নিচ্ছেন শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, ফতুয়া, ফ্রক ও নিমা।
সাতক্ষীরার আমিনিয়া মার্কেটে স্মার্ট পাঞ্জাবী হাউজের মালিক অভির সাথে কথা হলে তিনি জানান, এবার ঈদে কলার, কাফে কারুকাজ ও প্রিন্টের পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। আমাদের এখানে ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার ৫০০ টাকার পাঞ্জাবি আছে। তবে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকার পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। এছাড়া প্রিন্টের পাঞ্জাবির চাহিদা রয়েছে। দামের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে সুতার দাম বেশি, মজুরিও বেশি। আবার আমদানি করে আনা উপকরণের দামও বেশি।
এ সব কারণে এবার পণ্যের দাম কিছুটা বেশি। শুক্রবারের বিক্রি ও দামের বিষয়ে শহরের শতরুপা, ড্রেস কিং, ফ্যাশন হাউজের সহ শহরের বিভিন্ন দোকানের মালিক পক্ষরা জানায়, ১০ তারিখের পর বিক্রি জমে উঠবে। তবে ছুটির দিন থাকায় আজ ক্রেতা বেশি, বিক্রিও ভালো। দাম বাড়ার বিষয় স্বীকার করে তিনি বলেন, অন্য জিনিসের মতো পোশাকের দামও বাড়তি।
তবে অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পোশাকের দাম কম। সাতক্ষীরার বসুন্ধারা মার্কেটের কির্ডস ওয়ার্ল্ডের শহীদ ভাই জানান, তাদের শোরুমে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা দামের বাচ্চাদের বাহারি পোশাক রয়েছে। এছাড়া ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে ওয়েস্টার্ন পোশাক রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বিক্রিও ভালো। বিক্রেতারা বলছেন, এবার ও ঈদ ও পহেলা বৈশাখ (নববর্ষ) কাছাকাছি সময় হওয়ায় বাড়তি বিক্রির আশা করছেন তারা।
এরই মধ্যে যারা বেতন পেয়ে গেছেন, তারা আগেভাগে ছুটে আসছেন মার্কেটে। এখন পোশাক ও জুতা কিনছেন। এপ্রিলের ১৮-২০ তারিখ পর্যন্ত এভাবে পোশাক কেনাকাটার ভিড় থাকবে। তারপর ঘর সাজানোর তৈজসপত্র ও ক্রোকারিজ পণ্যের বিক্রি বাড়বে। ড্রেস কিং এর তরিকুল ইসলাম বলেন, বেতন ও নববর্ষের উৎসব ভাতা পেয়ে অনেকেই আগেভাগে কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন।
নতুন কোন কোন পোশাক এসেছে মার্কেট গুলোতে সে বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন অনেকেই। এ মুহূর্তে সবার নজর পহেলা বৈশাখ ও ঈদের পোশাকের দিকে। তিনি বলেন, আমরা ঈদের প্রস্তুতি অনেক আগেই নিয়েছি। সে কারণে আমরা পোশাকের দাম সেভাবে বাড়াইনি। আমাদের ২টা শোরুমে ক্রেতাদের ভিড় আশানুরূপ।
এ দিকে, পোশাকের মান নিয়ে অভিযোগ না থাকলেও দাম নিয়ে রয়েছে ক্রেতাদের বিস্তর অভিযোগ। এমনকি গত বছরের পোশাক এবছর রেখে সেগুলোর বাড়তি দাম নেওয়ার অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। গতবার যে পাঞ্জাবি ছিল এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা, এবার সেটার দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। পাঞ্জাবি-পায়জামা কিনতেই দেখা যাবে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এমনটিই বলছিলেন বিভিন্ন স্কুলে কলেজের ছাত্ররা।
পড়াশুনার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের খরচ জোগানো এক শিক্ষার্থী বলেন, সব ঈদে পোশাকের দাম বাড়ে। তবে এইবার একটু বেশি বেড়েছে।
ক্রেতারা বলছেন, বড়দের পাশাপাশি ছোটদের পোশাকের দামও অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। সাতশ থেকে আটশ টাকার নিচে ২-৩ বছরের বাচ্চাদের কোনো পোশাক নেই। বাড়তি দাম হওয়ায় অনেকেই পোশাকের বাজেট ছেটেছেন কিংবা কম পোশাক কেনার কথা ভাবছেন।
শহরের মীম গার্মেন্টস থেকে মেয়ে শিশুর জামা কিনে বের হওয়ার সময় কথা হয় ইটাগাছার গৃহিণী সুমাইয়া সুলতার সঙ্গে। তিনি বলেন, দাম বেশি, কিছু তো করার নেই। শোরুমে তো দামাদামিও করা যায় না। আমাদের যাদের ফিক্সড ইনকাম তারা হয়তো পোশাক কম কিনবে। বাচ্চা কিনলে বাবা কিনবে না, বা কম দামেরটা কিনবে। ঈদ ও পহেলা বৈশাখে সবাই নতুন পোশাক পরতে চায়। উৎসব তো বাচ্চাদের জন্যই।
ফ্যাশন হাউজ গুলোর পাশাপাশি ফুটপাতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। যদিও ফুটপাতের বেচাকেনাতে ক্রেতারা একটু সাশ্রয় বোধ করেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সুমি গার্মেন্টস এর আনসার আলী বলেন, ক্রেতারা শোরুমে আসতে পারেন না। ফুটপাতে প্রচুর ভিড় থাকে। ক্রেতারা ফুটপাত থেকে কিনেই চলে যান। শোরুমের প্রোডাক্টই কম দামে বিক্রি করেন এমন কথা বলে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেন ফুটপাতের বিক্রেতারা।
তিনি বলেন, যেহেতু দোকান ভাড়া ও কর্মচারী বেতন লাগে না, তাই ফুটপাতের বিক্রেতারা লোকাল প্রোডাক্ট কম দামে বিক্রি করতে পারেন। রাস্তার দুই পাশের হকার শোরুমগুলোর মাথাব্যথার কারণ বলে দাবি করেন তিনি।