রংপুরে আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
মাটি মামুন রংপুর।
আমের চাষ হচ্ছে রংপুরের প্রতিটি উপজেলায় রাস্তার ধারে,বাড়ির উঠানে কিংবা ফসলি জমিতে সারি সারি
হাড়িভাঙ্গা আম গাছ।
রংপুর সদরের ভুরারঘাট রাণীপুকুর, ধাপেরহাট এলাকা থেকে শুরু করে মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের তারপরও অনেক স্থানেই ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছিল।
হাড়িভাঙ্গা ছাড়াও রংপুরের বিভিন্ন উপজেলায় বিশেষ করে মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ এবং সদরের কিছু এলাকায় আরও কয়েকটি জাতের স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় সুমিষ্ট আম চাষ হচ্ছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কফিল বাংড়ি, এসআর
তেলি এবং আমপলি।
আসন্ন মৌসুমে নির্বিঘ্নে আম বাজারজাত এবং দুর্যোগকালীন সময়ে দুশ্চিন্তা তাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি বিপণন, পরিবহন এবং রংপুর কৃষি অঞ্চলে প্রকৃতিও নতুন সাজে সাজতে শুরু করেছে।
বিশেষ করে রংপুরের মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ ও সদরের প্রকৃতি ভিন্নরূপে সেজেছে সারি সারি হাড়িভাঙ্গা আমের বাগানে সবুজের মাঝে কাঁচা হলদে রঙ নিয়ে।
হাড়িভাঙ্গা আমে অর্থনীতিতে যোগ করেছে এক নতুন মাত্রা, তাই চলতি বছর ৫০০ কোটি টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা জানিয়েছে আম চাষী কৃষকরা ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর রংপুরে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ২১৫ হেক্টরের বেশি জমিতে আম চাষ হয়েছে।
এর মধ্যে হাড়িভাঙা চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর
জমিতে।
প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হয় ২০ থেকে ২২ মেট্রিক টন। হাড়িভাঙ্গা বাগানে প্রতিটি গাছে শুধু মুকুল আর মুকুল।
কৃষি বিভাগ বলছে, মাঘের শেষ দিকের দুই দফা বৃষ্টি হাড়িভাঙ্গার জন্য প্রকৃতির এক দারুন উপহার। বৃষ্টির পর থেকেই গাছের প্রতিটি ডালপালা থেকে বের হতে শুরু করে হলুদ রঙের মুকুল। এরই মধ্যে মুকুলে মুকুলে ছেয়ে যেতে শুরু করেছে প্রতিটি আম বাগান। চারদিকে মৌ মৌ গন্ধ।
বাগানে বাগানে মৌমাছির আনাগোনা এক
ভিন্ন পরিবেশ তৈরি করেছে। প্রকৃতির স্বাভাবিক
নিয়মে বসন্তের প্রথম সপ্তাহ থেকে হাড়িভাঙ্গা আম
গাছে মুকুল আসতে শুরু করে। কিন্তু এবার বসন্তের
আগেই অনেক স্থানে মুকুল আসা শুরু হয়েছে।
অত্যন্ত নজরকাড়া সুমিষ্ট এবং আঁশবিহীন রংপুরের
‘হাড়িভাঙ্গা’ আমের দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশে
চলে গেছে। রংপুরের পদাগঞ্জ এলাকার হাড়িভাঙ্গা
আমের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। চাহিদা
বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষাবাদের পরিধিও বেড়ে চলেছে।
একমাত্র হাড়িভাঙ্গা আমই গত কয়েক বছরে রংপুর
অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা বদলে দিয়েছে।
সেই সাথে এই আম রংপুরের অর্থনীতিতে যোগ করেছে
এক নতুন মাত্রা। আগে জেলার মাত্র দুটি
উপজেলার কিয়দংশে এই আম চাষ হলেও এখন
প্রায় সব উপজেলাতেই বাণিজ্যিকভাবে হাড়িভাঙ্গা
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ
ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন আম
চাষি ও ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে এই অঞ্চলে একটা হিমাগার স্থাপন করার দাবিও জানিয়েছেন আম চাষিরা। আমচাষি, ব্যবসায়ী ও কৃষি সম্প্রাসারণ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে হাঁড়িভাঙা
দেশের গন্ডি পেরিয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে হাঁড়িভাঙা আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে এবারও বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। গত বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার আম বিক্রি হয়েছে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে এবার ৫০০ কোটি
টাকার আম বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য
জেলার আম যখন শেষ পর্যায়ে, তখনই হাঁড়িভাঙা
আম বাজারে আসতে শুরু হয়।
এই আম প্রায় দেড় মাস বাজারে পাওয়া যাবে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান বলেন,
রংপুর এখন হাঁড়িভাঙা আমের জন্য বিখ্যাত।
এখন আমের গাছে গাছে মুকুল এসেছে প্রচুর। কৃষি
সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমরা চাষিদের
ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি
নিয়মিত প্রেসক্রিপশন দেওয়া হচ্ছে। এখন
আবহাওয়া যদি রৌদ্রজ্জ্বল হয় এবং তাপমাত্রা একটু
একটু করে বাড়ে তাহলে সমস্যা হবে না। সব
মিলিয়ে প্রকৃতি বিরুপ না হলে, এবারও আমের
বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
পদাগঞ্জে যেতে দেখা যায় বাগানের পর বাগান।
বাড়ির চারপাশ ছাড়াও বিভিন্ন ফসলি জমিতে
লাগানো হয়েছে হাড়িভাঙ্গা আমের গাছ। একই চিত্র
মিঠাপুকুরের আখিরাহাট, মাঠেরহাট, খোড়াগাছ,
ময়েনপুর, মৌলভীগঞ্জের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা ছাড়াও
বদরগঞ্জের গোপালপুর, নাগেরহাট, কুতুবপুর,
কাঁচাবাড়ি, সর্দারপাড়া, রোস্তমাবাদ, খিয়ারপাড়া,
রংপুর সদরের সদ্যপুস্করনী ইউনিয়নের কাঁটাবাড়ি,
পালিচড়াসহ অন্যান্য এলাকাতেও। কৃষি বিভাগের
তথ্যানুযায়ী, এবার জেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার
হেক্টরের বেশি জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের চাষ
হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি হাড়িভাঙ্গা
আম। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন হবে।
রংপুর জেলায় সব ধরনের আমের উৎপাদন
লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক
টন। এর মধ্যে হাড়িভাঙ্গা আমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা
হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন।
হাড়িভাঙ্গা আম খ্যাত রংপুরের পদাগঞ্জ ও কুতুবপুর
ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কিছু
কিছু বাগানে পুরোপুরি মুকুল এলেও অধিকাংশ
বাগানেই এখনও মুকুল আসেনি। এসব বাগানে
চাষিরা সেচ প্রদানের পাশাপাশি ভিটামিন জাতীয়
ওষুধ প্রয়োগসহ বিভিন্নভাবে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত
হয়ে পড়েছেন।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে হাড়িভাঙ্গাসহ বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়।
ওই বছর আম বিক্রির টার্গেট ছিল প্রায় ২২৫ কোটি
টাকার।
কিন্তু মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে গুটি আসার আগেই
অধিকাংশ বাগানে গাছ থেকে মুকুল ঝরে যায়।