তানিয়া আক্তার, নাটোর প্রতিনিধিঃ
ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। কেএসআরএম কোম্পাণীর ওই জাহাজে ২৩ জন বাংলাদেশী নাগরিক জলদস্যুদের হাতে জিম্মি রয়েছেন। ওই জাহাজে জয় মাহমুদ নামে নাটোরের একজন ক্রু আছেন। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সালাইনগর গ্রামের মোঃ জিয়াউর রহমানের ছেলে জয় মাহমুদ। তিনি ২০০০ সালের ২৮ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহন করেন। মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে এমভি আব্দুল্লাহ নামের বাংলাদেশি ওই জাহাজের ক্রু নাটোরের জয় মাহমুদ সহ ২৩ জন বাংলাদেশী নাগরিক সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে জিম্মি হয়। জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ারা হলেন মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ (৫৮), চিফ অফিসার মো. আতিকুল্লাহ খান (৩৯), সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী (৩৬), থার্ড অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম (২৯), ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন (৩৪), চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান (৪৫) ও ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান (২৩), সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম (৩৮), থার্ড ইঞ্জিনিয়ার রোকন উদ্দিন (৩৩), চতুর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ (৩০), ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ (৩৫), নাবিক মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক (২৯), নাবিক আসিফুর রহমান (২৫), নাবিক মো. সাজ্জাদ হোসাইন (২৯), নাবিক মাহামুদ জয় (২৪), নাবিক মো. নাজমুল হক (২৩), অয়েলার আইনুল হক (৩০), অয়েলার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন (৩১), অয়েলার মো. আলী হোসাইন (২৬), ফায়ারম্যান মোশাররফ হোসাইন শাকিল (৩৪), চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম (৩৪), জেনারেল স্টুয়ার্ড মোহাম্মদ নুর উদ্দিন (২৮) , ফিল্টার মোহাম্মদ ছালে আহমেদ (৪৭)ও নাটোরের বাগাতিপাড়ার নাবিক মাহামুদ জয় (২৪)।
মঙ্গলবার রাত ৯ টার দিকে এই খবর প্রচারের পর নাটোরের বাগাতিপাড়ার সালাইনগর গ্রামে জয় মাহমুদদের বাড়িতে শোকের মাতম শুরু হয়। জয়ের মা সহ তার বাড়ির সকল সদস্য প্রায় সময় তার সাথে যোগাযোগ রাখতেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪ টার সময়েও জয় মাহমুদের সাথে কথা হয়েছে তার পরিবারের।
তার চাচাতো ভাই মারুফ হোসেন জানান, মঙ্গলবার ৪ টার দিকে জয়ের মা ও বাবা তার ছেলের সাথে শেষ বারের মত কথা বলেছেন। এসময় আমিও তার সাথে কথা বলি। জয় আমাকে জলদস্যুদের কবলে পড়ার কথা জানালেও তার বাবা-মাকে বলেনি। সন্ধ্যা ৬টা ৩৯ মিনিটের সময় জয় মাহমুদ তার হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে লিখে জানায় এর পর আর তারা কথা বলতে পারবেননা। তাদের মেবাইল কেড়ে নেয়া হচ্ছে। এর পর আর কথা বলা যায়নি। রাত্রি ৯টার দিকে জয় মাহমুদ জেনেছেন তারা জলদস্যুদের কবলে পড়েছেন। এর পর থেকে পরিবারের সদস্য বিশেষ করে তার মা মোছাঃ আরিফা বেগম ছেলের অমঙ্গলের আশংকায় কেঁদে চলেছেন। আমরা জয় মাহমুদের কোম্পাণীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি শেষ খবর জানার জন্য। জয় মাহমুদরা দুই ভাই বোন। জয় মাহমুদ বড়, ২০২১ সালে জাহাজে চাকরী নেয়। এর পর প্রশিক্ষন শেষে চার মাস ছুটি কাটিয়ে জাহাজে যায়।
তার মা মোছাঃ আরিফা বেগম বলেন, আজ বিকেল ৪ টার দিকে কথা বলার সময় জয় জানায় তারা আফ্রিকার মধ্যে রয়েছেন। আমাকে বলে সে ভাল আছে। আমার বাছা ২০২১ সালে জাহাজে চাকরীতে যোগ দিয়ে ট্রেনিং নিয়ে ছুটিতে বাড়িতে আসে। এর পর সে জাহাজে যায়। জাহাজে যাওয়ার প্রায় ৪ মাস হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই তার সাথে কথা হয় জয়ের।
জয় মাহমুদের পিতা জিয়াউর রহমান বলেন, তারা রাত ৯টার দিকে জানতে পেরেছেন তার ছেলে সহ জাহাজের সবাই জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। তিনি সরকারের কাছে তার ছেলে সহ আটকা পড়া সকল ক্রু’দের সুস্থ ও জীবিত উদ্ধার করার আবেদন করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মজিবর রহমান বলেন, রাত ৯ টার দিকে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে জয় মাহমুদ সহ এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের ২৩ ক্রু জলদস্যুদের পড়ার খবর জানতে পেরেছেন। এর পর থেকে এলাকার মানুষ অজানা আশংকায় সময় কাটাচ্ছেন। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই, আটকা পড়াদের যেন সুস্থভাবে উদ্ধার করা হয়।