মোহাম্মদ নোমান, কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে। সারা বছরের কর্মব্যস্ততা শেষে এই শহরে পর্যটন মৌসুম, সরকারি ছুটি ও বিশেষ দিবসে ৪ লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটে এই কক্সবাজারে। আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর, টানা ছুটি ও বাংলা নববর্ষের কারণে এবারে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ভ্রমণে আসবেন প্রায় ৪ লক্ষাধিক পর্যটক। আর এসব পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ সর্বদায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
ঈদ ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কক্সবাজার বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম সমুদ্রসৈকত ছাড়াও টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, টেকনাফ, চকরিয়া ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক এলাকায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিয়ে যাবে। কক্সবাজারে ২৫ টি সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে প্রত্যেক কর্ণারে মনিটরিং করা হবে। ছিনতাইয়ের তৎপরতা যেন না থাকে এজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের মোটরসাইকেল টিম থাকবে মোড়ে মোড়ে, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা টিম থাকবে, ক্যামেরা ও বাইকারদের সাথে পর্যটন হয়রানি না করার জন্য সভা করেছি। আমাদের অবস্থান খুবই শক্ত, আমারা হোটেল মালিক সমিতিতে বলেছি তারা যেন অহেতুক ভাড়া না বাড়ায়, পাশাপাশি রেস্তোরাঁ মালিক সমিতিকে বলেছি তারা যাতে পঁচা বাসি খাবার না খাওয়ায়, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে মিটিং করেছি ট্যুরিস্ট পুলিশের সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য ও ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে মিটিং করেছি ট্রাফিক ডিভিশনটা শক্ত ভাবে দেখছেন এবং দেখবেন।পর্যটকরা তাদের সমস্যা সরাসরি ট্যুরিস্ট পুলিশকে অবগত করতে পারবেন। যারা পর্যটকদের হয়রানি করবে তাদের মুহূর্তের মধ্যে আটক করার জন্য আধুনিক সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এছাড়াও সৈকতে বসানো হয়েছে টেলিকম সেবা, এল্যার্ম বাটন ও মোবাইল চার্জিং সেবা। সরাসরি পুলিশের সেবা পেতে পারেন সেজন্য ইন্টারকম ও ইমার্জেন্সি বাটন স্থাপন, কক্সবাজারে প্রায় ৪ লক্ষাধিক পর্যটক আসতে পারে, তাদের আসার ক্ষেত্রে বাস স্টেশন, রেল স্টেশন, বিমানবন্দরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটক হয়রানি বন্ধে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স। দালাল চক্র কক্সবাজারে থাকতে পারবে না। জেলার সমুদ্র সৈকতসহ সকল পর্যটন এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ।
তিনি আরও বলেন, মূলত পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পর্যটকদের নিরাপদ আবাসন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পর্যটকদের সুবিধা ও অসুবিধার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করা, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া, কোনো পর্যটক অসুস্থ হলে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়ে বা কোনো ধরনের সতর্কবার্তা থাকলে সেটি তাৎক্ষণিক পর্যটকদের অবহিত করা, অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাওয়া, দূর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ট্যুরিস্ট পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে করে থাকেন। তারা সব সময় দর্শনার্থীদের খেয়াল রাখেন। কেউ কখনো অসুস্থ হলে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন। এছাড়া কোনো দর্শনার্থী যদি তার স্বজন হারিয়ে ফেলেন তাদের খোঁজার ক্ষেত্রেও পুলিশ সদস্যরা তৎপর। সব মিলিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রমে কক্সবাজারে পর্যটনশিল্প নতুন মাত্রা পেয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ শুধু পর্যটকদের যে কোনো সমস্যা সমাধান, হয়রানি রোধ, বখাটে ও সন্ত্রাসীদের তৎপরতা প্রতিহত করেন না বরং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রত্নসম্পদ চুরি ঠেকানো এবং পর্যটন সম্পদ ধ্বংস প্রতিরোধে ২৪ ঘণ্টা নিয়োজিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, আরো উন্নয়নমূলক ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান।
হোটেল মালিকরা জানান,পর্যটন মৌসুম, সরকারি ছুটি ও বিশেষ দিবসে প্রতিটি হোটেল-মোটেল পর্যটকে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আসছে ঈদ ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আবাসিক হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও দোকানগুলো সাজানো হয়েছে অনেক আগে থেকেই। কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের ৭৫ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে বলে জানা যায়।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, আগামী ১১ এপ্রিল থেকে পর্যটকদের আসা শুরু হবে। বেশি পর্যটক আসবেন ঈদের পরের দিন থেকে। ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ থাকায় ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কিছু পর্যটক থাকবেন। সব মিলিয়ে ঈদের ছুটিতে প্রায় ৪ লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটতে পারে।
কক্সবাজার রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী জানান, ঈদ ও বৈশাখ উপলক্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ১০ দিনের জন্য বিশেষ ট্রেন চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই ঈদে পর্যটকরা ট্রেনে চড়ে আনন্দ-খুশিতে মাতবেন বলে তিনি আশা করেন।
এবার কক্সবাজারে ঈদের পর থেকে আসা পর্যটকরা এমন নিরাপত্তা সেবা উপভোগ করতে পারবেন। চুরি, ছিনতাই, হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্রসহ একাধিক বিষয়ে সেবা নিশ্চিত করতে পুলিশের এই ব্যতিক্রম উদ্যোগ। ট্যুরিস্ট পুলিশের এমন নিরাপদ ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয়রা।